শাহিন বাবু
দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া কোন চমক দেখাতে পেরেছেন? এমন প্রশ্ন যখন অনেকেই করছেন, ঠিক সে সময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিগত সময়ের কর্মকান্ড নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন, প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেন এবং প্রধান প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র দেবনাথ ( রুটিন ওয়ার্ক) অবসরে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি একজন কর্মদক্ষ প্রধান প্রকৌশলীর শূণ্যতায় ভুগছিলো। সে সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়ার নাম প্রস্তাবিত হয়। যিনি বিগত সময়ে এলজিইডির প্রশাসন এবং মানব সম্পদ বিভাগে সফলতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্বপালনকালে তার কর্মদক্ষতা প্রশংসিত হয়।
এলজিইডি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থা, যার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বেশি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করে থাকে। উল্লেখ্য যে, এলজিইডি:
এলজিইডি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এবং এক্ষেত্রে প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া তার পুরো কর্মজীবনে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখেন।
যার স্বীকৃতিস্বরুপ চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশীদ মিয়াকে (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ) এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে আব্দুর রশীদ মিয়া দায়িত্ব নেওয়ার পর,তিনি এলজিইডির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন, গতিশীলতা বৃদ্ধিতে নিরলস ভাবে কাজ করছেন। তিনি যোগদানের পর এলজিইডির বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করেছেন এবং কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন। এতে করে প্রানস্পন্দন ফিরতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর আব্দুর রশীদ মিয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড হলো:
এলজিইডির দৈনন্দিন কার্যক্রম, বিশেষ করে গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়মিতভাবে তদারকি করছেন।
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত সভা করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
গ্রামীণ রাস্তা, সেতু, কালভার্ট এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ তদারকি করছেন এবং এগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
আব্দুর রশীদ মিয়া এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর, তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে মূলত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্ঠার এবং সচিবের পরামর্শে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে আস্থাবৃদ্ধিতে সফলতার সাথে কাজ করে চলছেন । তিনি ইতোমধ্যে তার অভিজ্ঞতার আলোকে কর্মদক্ষতায় দীর্ঘ সময় পর কর্মমুখর করে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে ।
বিগত সময়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন)-এ দীর্ঘসময় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে মানবসম্পদ, পরিবেশ ও জেন্ডার ইউনিটেও কর্মরত ছিলেন। আব্দুর রশীদ মিয়া ২০২৩ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ ইউনিট) হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-৪)-এর দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুর রশীদ মিয়া মেধাবী, কর্মঠ, দক্ষ ও সৎ প্রকৌশলী হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন। পেশাদারি উৎকর্ষ সাধনে তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কারিগরি, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ নেন।
তিনি মানব সম্পদ বিভাগে দায়িত্বপালনকালে প্রতিষ্ঠানের জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জনবল নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মীর দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি, এবং একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি করেন। এছাড়াও, মানব সম্পদ বিভাগ কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা করে এবং তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন সহায়তায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।
সংক্ষেপে, এলজিইডির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান কাজগুলি হল:
কর্মীদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা এবং তাদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করা।
একটি স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনশীল কর্মপরিবেশ তৈরি করা, যেখানে কর্মীরা নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে।
কর্মীদের বেতন, ভাতা, ছুটি, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
কর্মীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করা, যাতে তারা তাদের কর্মজীবনে আরও ভালো করতে পারে।
এই কাজগুলির মাধ্যমে, এলজিইডি তাদের জনবলকে আরও দক্ষ, প্রশিক্ষিত, এবং অনুপ্রাণিত করে তোলে, যা সংস্থার সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। এলজিইডির মানব সম্পদ বিভাগের দায়িত্ব পালনকালে কাঠামোগত জনবলের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন।।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রশাসনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন)- হিসেবে আব্দুর রশীদ মিয়া দায়িত্বপালকালে গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এলজিইডি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এলজিইডি’র প্রশাসনের প্রধান কাজগুলো হল:
জনবল নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, এবং কর্মীদের কর্মজীবন ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত কাজগুলি করা।
এলজিইডি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করে এবং ডিজাইন করে। এর মধ্যে রাস্তা, সেতু, কালভার্ট, Water Resource Management, এবং অন্যান্য অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত।
এলজিইডি পরিকল্পনা করা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে। এই কাজে দরপত্র আহবান, ঠিকাদার নিয়োগ, এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত।
নির্মিত অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলজিইডি দায়িত্ব পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে মেরামত, সংস্কার, এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ করা।
এলজিইডি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। যেমন, প্রকৌশল বিষয়ক পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা।
এলজিইডি তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ করে এবং কাজের গুণগত মান মূল্যায়ন করে।
এলজিইডি তাদের নিজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর দিক নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি তার সৃজনলীল মনন থেকে দেশজুড়ে এলজিইডির জনবলের মধ্যে কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভুমিকা রাখেন।
এলজিইডি গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে, গ্রামীণ রাস্তা, বাজার, এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা। সে সবে তার কর্মদক্ষতা নানান ভাবে প্রশংসিত হয়। নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন।
প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশীদ মিয়া ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬-এ সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার পাটাগ্রাম গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জমির উদ্দিন মিয়া এবং মাতার নাম রহিমা বেগম। আব্দুর রশীদ মিয়া ১৯৭১ সালে পাটাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৮১ সালে তারাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৩ সালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। আব্দুর রশীদ মিয়া ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব টেকনোলজি (বিআইটি) বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) থেকে পুরকৌশলে স্নাতক এবং ২০১৪ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
আব্দুর রশীদ মিয়া জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি মিতসুবিসিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯-এ বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি)-এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি)-তে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে এলজিইডি কুষ্টিয়া জেলায় যোগাদান করেন এবং সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে আব্দুর রশীদ মিয়া সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি “ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীনিবাস নির্মাণ শীর্ষক” প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। এটি ছিল পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত প্রথম আবাসন প্রকল্প। আব্দুর রশিদ মিয়া রাজশাহী বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রাজশাহী বিভাগের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আব্দুর রশীদ মিয়া ২০১৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান।
একজন পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে তিনি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব গ্রহনের পর অনেকটা ঘুড়ে দাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দায়িত্বশীল সংশ্লিস্টরা বলছেন প্রতিষ্ঠানটির বৃহৎ স্বার্থে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা জরুরী।